দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে এক কন্টেইনার সমান প্রায় ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য মোট ব্যয় হবে ১০০৪ কোটি ৬৯ লাখ ৮ হাজার ৮৭২ টাকা।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স ভাইটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এই এলএনজি সরবরাহ করবে।

চাহিদা অনুযায়ী প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অন্যান্য শিল্পে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এ সমস্যা মোকাবেলায় সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করছে। ইতোমধ্যে পেট্রোবাংলা ৩২ হাজার কোটি টাকা চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য কাতার গ্যাস এবং ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এলএনজি আমদানির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি কেনা হচ্ছে।

স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার লক্ষ্যে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) প্রস্তুত করে আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ করা হয়। সে প্রেক্ষিতে এমএসপিএটি চূড়ান্ত করা হয়। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদনের ভিত্তিতে পেট্রোবাংলা অনুস্বাক্ষরকারী ১৬টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চূড়ান্তকারী এমএসপিএ স্বাক্ষর করে।

সূত্র জানায়, দেশে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে স্পট মার্কেট থেকে ২০২২ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সর্বমোট ১৩টি কার্গো এলএনজি সংগ্রহের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেছে।

করোনার কারণে সরাসরি অথবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দরপ্রস্তাব গ্রহণ না করে এলএনজি স্পট পার্চেজ (এলএসপি) সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইতোপূর্বে প্রথম প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। ওই দরপ্রস্তাবের প্রেক্ষিতে পাওয়া দরপত্রগুলোর কারিগরি ও আর্থিকভাবে নন রেসপন্সিভ হওয়ায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের জন্য অনুমোদিত এক কার্গো এলএনজি আমদানি করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০২০,২০২১ ও ২০২২ সালে স্পট মার্কেট থেকে কার্গো গ্রহণের জন্য ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে মোট ২৬টি দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হয়। তারমধ্যে ২০টি কার্গো এলএনজি নেওয়ার জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালের মার্চ মাসে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য স্পট মার্কেট থেকে ১ কার্গো এলএনজি আনা জরুরি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি আরপিজিসিএল থেকে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ১৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে আগামী মার্চ মাসের জন্য স্পট ভিত্তিতে ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের দরপ্রস্তাব আহ্বান করে ই-মেইলে চিঠি পাঠানো হয়। ওই দরপ্রস্তাবে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।

সূত্র জানায়, কারিগরি শর্তের মধ্যে রয়েছে, এমএসপিএ’র সিডিউল ৯(এ) তে বর্ণিত এলএনজি’র গুণগত মান ও হিটিং ভ্যালু অনুযায়ী ৩১ লাখ থেকে ৩২ লাখ এমএমবিটিইউ এলএনজি সরবরাহ করতে হবে; ২০২২ সালের ১১-১২ মার্চ তারিখের মধ্যে এলএনজি সরবরাহ করতে হবে; সরবরাহতব্য এলএনজি কার্গোটি দেশে বিদ্যমান দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে সরবারহের উপযোগী হতে হবে।

অন্যদিকে আর্থিক বিষয়ে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়। সরবরাহতব্য এলএনজি’র একক দর মার্কিন ডলার/এমএমবিটিইউ’তে উল্লেখ করতে হবে এবং সরবরাহতব্য এলএনজি’র একক দরপ্রস্তাব কনফারমেশন নোটিশ অথবা দরপ্রস্তাব উন্মুক্ত করার পর থেকে চার দিন (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২) পর্যন্ত কার্যকর থাকতে হবে।

সূত্র জানায়, দরপত্রে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মেসার্স ভাইটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি এমএমবিটিইউর দাম ২৯.৭০০০ ডলার উল্লেখ করে রেসপন্সিভ হয়। প্রতি এমএমবিটিইউ ২৯.৭০০০ ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৯৯ মিলিয়ন ৭৯২ হাজার মার্কিন ডলার (ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া) যা দেশীয় মুদ্রায় ৮৫৮ কোটি ৭১ লাখ ১ হাজার ৬০০ টাকা।

এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ২ শতাংশ আইটি প্রযোজ্য বিবেচনায় সর্বমোট ১৭ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ১৪৫ কোটি ৯৮ লাখ ৭ হাজার ২৭২ টাকা। অর্থাৎ ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি করতে মোট ব্যয় হবে একহাজার ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৮ হাজার ৮৭২ টাকা।

সূত্র জানায়, এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।